Friday, February 1, 2013

সমুদ্র সম্পদ বদলাতে পারে অর্থনীতি

 সমুদ্র সম্পদ বদলাতে পারে অর্থনীতি
প্রতিদিন ডেস্ক
বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমা মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণীর এক বিশাল ভাণ্ডার। এ জলসীমায় রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও ৩৭ প্রজাতির চিংড়ি। আছে কাঁকড়া, কচ্ছপ, কুমির, হাঙর, সি-আরসিম, সি-কুকুমবার, জেলি ফিশ, শামুক, ঝিনুক। রয়েছে নানা পুষ্টিগুণসম্পন্ন আগাছা। কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। আহরণ, সংরক্ষণ ও আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এসব সামুদ্রিক সম্পদ রপ্তানি করে দেশ অর্জন করতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আয় করতে পারে বিপুল রাজস্ব। শক্তিশালী হতে পারে দেশের অর্থনীতি। বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজ সম্পদ আছে তা পৃথিবীর অন্য কোনো সাগর, মহাসগর, উপসাগরে নেই। মণি, মুক্তা, স্বর্ণ, লোহা, তামা, রুপা, প্রবালসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ এখানে রয়েছে বলে প্রাচীন ভারতবর্ষের পৌরাণিকে বঙ্গোপসাগরের নাম দেওয়া হয়েছিল 'রত্নাকার'। এরই মধ্যে বেশ কিছু গ্যাসের খনির সন্ধান মিলেছে। গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়ার কাজও চলছে।

বাংলাদেশের জলসীমায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক আগাছা। এগুলো ব্যবহার হতে পারে মানুষের খাদ্য হিসেবে। কিংবা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যেতে পারে নানা ধরনের ওষুধ। বিদেশে এই আগাছার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কচ্ছপ, কুমির ও হাঙর। বিদেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সামুদ্রিক কচ্ছপ উচ্চ প্রোটিনসম্পন্ন। ফলে বিদেশিরা এটিকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। এ ছাড়া তেল ও ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার করা হয় কচ্ছপ, কুমির ও হাঙর। সামুদ্রিক সম্পদের মধ্যে হাঙর হলো উল্লেখযোগ্য মূল্যবান একটি সম্পদ। হাঙরের পাখনা বেশ মূল্যবান। এর পাখনা বিদেশে স্যুপ ও বেকারির তৈরি খবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া হাঙরের লিভার অত্যন্ত মূল্যবান। এ ছাড়া সি-আরসিম ও সি-কুকুমবার দেশে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার না হলেও বিদেশে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তারা এগুলোকে সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থাকা আগাছা মানবদেহের জন্য পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এ আগাছা প্রক্রিয়াজাত করে পশুপাখি, জীবজন্তুর খাবার তৈরি করে থাকে বিদেশিরা। অথচ তারা এসব মূল্যবান আগাছা উপকূলে কৃত্রিমভাবে চাষ করে প্রয়োজন মেটায়। সামুদ্রিক আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা সবচেয়ে মূল্যবান, যা জাপান, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। তারা এ আগাছার চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটায়। বাংলাদেশের আরেক সামুদ্রিক সম্পদ জেলি ফিশ, যার বিপুল চাহিদা বিদেশে। এ ছাড়া শামুক ও ঝিনুক তো আছেই। এ ছাড়া রুপচাঁদা, নানা জাতের ভোল, পোয়া, ফাহা, তাপসী, শাপলা পাতা, রুই, কাতলা, পাঙ্গাশ, টেংরা, কাজলি, আইড়, বোয়াল, কোরাল ও লটিকাসহ জানা-অজানা হরেক প্রজাতির সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগর। এ সম্পদ হতে পারে অর্থনীতির চালিকাশক্তি। পরিবেশ ও উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের রিসার্স ফেলো মো. গোলাম মাহাবুব সরওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রয়েছে চারটি মৎস্যক্ষেত্র। প্রথমটি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড মৎস্যক্ষেত্র। এর অবস্থান সুন্দরবনের দক্ষিণে দুবলারচর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। এ মৎস্যক্ষেত্রটির আয়তন প্রায় চার হাজার বর্গ কিলোমিটার। দ্বিতীয়টি সেন্ট্রাল ফিশিং গ্রাউন্ড। এটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মৎস্যভাণ্ডার। সাড়ে চার হাজার বর্গ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি আয়তনের এ মৎস্যক্ষেত্রটির অবস্থান ভোলা ও হাতিয়া দ্বীপের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। তৃতীয় মৎস্যক্ষেত্রটির নাম সাউথ ফিশিং গ্রাউন্ড। এটি মহেশখালী দ্বীপের ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। আয়তনে এটি প্রথমটির চেয়ে ছোট। চতুর্থটির নাম এঙ্ট্রিম সাউথ ফিশিং গ্রাউন্ড। এটি সবচেয়ে ছোট মৎস্যভাণ্ডার। এ ক্ষেত্রগুলোতে প্রায় ৪৪০ প্রজাতির মাছ বিচরণ ও প্রজনন করে থাকে। তিনি বলেন, এখানে রয়েছে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, পাঁচ প্রজাতির লবস্টার, ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া, সাত প্রজাতির কাছিম, ১০ প্রজাতির ডলফিন, তিন প্রজাতির তিমি এবং প্রায় ২০০ প্রজাতির সি উইড (ঘাস)। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ৫২ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন চিংড়ি এবং চার লাখ ৬৪ হাজার ৬৯০ টন অন্যান্য মাছ আহরণ করা হয়।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের তলদেশে শৈবাল, প্রবাল, ফায়ার মুডিসহ মণি, মুক্তার সন্ধান পেয়েছেন ডুবুরিরা। সেন্টমার্টিনের প্রবাল আর দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার সৈকতের শামুক-ঝিনুকে বছরে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, কঙ্বাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের বদরমোকাম পর্যন্ত দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় দুই কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৯৮ টন খনিজ পদার্থ অপরিশোধিত অবস্থায় আছে। জিরকন, কায়ানাইট, গারনেট, ম্যাগনেট্রাস্ট, মোনাজাইট, লিউকঙ্নিসহ সৈকতবালিতে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদগুলোর বিপুল চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশের শিল্প-কারখানায়। বাদামি রঙের মোনাজাইট অতি মূল্যবান পদার্থ। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে এবং পারমাণবিক চুলি্লতে শক্তি উৎপাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের সূত্র মতে, সৈকতবালিতে মোট খনিজের প্রাক্কলিত মজুদের পরিমাণ ৪৪ লাখ টন। আর প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন। বিশ্ববাজারে উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন এসব সামুদ্রিক খনিজ সম্পদ রপ্তানি করে আয় করা যেতে পারে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।

তবে এত বিশাল সামুদ্রিক সম্পদের ভাণ্ডার থাকলেও দেশে নেই এগুলো আহরণ ও সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা। কারণ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অনিয়ন্ত্রিত নয়, যেমনটা থাকা দরকার। ফলে ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এসব দেশের জেলে ও জলদস্যুরা বাংলাদেশের মৎস্য আহরণকারীদের মাছ ধরার ট্রলার ও অন্যান্য সরঞ্জামও লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া দেশীয় জলদস্যুরাও সাধারণ জেলেদের ওপর নির্যাতন-লুটপাট চালিয়ে আসছে। এ কারণে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার জেলে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিত মৎস্য ও মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ১১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩০০ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো নেওয়া এ উদ্যোগ সফল করতে সমুদ্রের জলসীমায় কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থাসহ পানিতে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্প' গ্রহণ করা হয়েছে। এর অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক। প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ (রিসার্চ ভেসেল) ক্রয়। জাহাজটির মাধ্যমে সমুদ্রে চলবে ল্যান্ড, ডিমারসাল ও প্যালাজিক সার্ভে কার্যক্রম। এ ছাড়া জাহাজটি নির্ণয় করবে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদের বিচরণক্ষেত্র, প্রজণনক্ষেত্র, আহরণের সময়, সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণ মাত্রাসহ সামুদ্রিক প্রাণীর নানা দিক। এদিকে, সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদের অপার সম্ভাবনাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত সম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফিশ অ্যান্ড শ্রিম্প ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, 'সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্ট হওয়ার ফলে জাহাজগুলোর নিরাপদ চলাচল ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।' পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মো. লোকমান আলী বলেন, নেট জালে প্রতিটি বাগদা পোনা আহরণ করলে গড় হারে অন্য প্রজাতির ৯৯টি পোনা সাগরপাড়ে বালুর ওপর মারা যায়। সরকারের উচিত জেলেরা এভাবে যেন পোনা মাছ না মারে প্রচার চালিয়ে তাদের সচেতন করা। তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তির মেশিন (ইকো ফাউন্ডার) সংবলিত সি-বোট রয়েছে বাইরের দেশগুলোতে। ওই মেশিন দিয়ে সাগরের তলদেশে শব্দ ছুড়লে একটি প্রতিশব্দ আসে, যা থেকে মাছের ঝাঁকের অবস্থান (ফিশিং গ্রাউন্ড) বোঝা সহজ হয়। জেলেদের সেসব স্থান নির্ণয় করে দিলে অল্প সময়ে তারা বেশি মাছ আহরণ করতে পারবে। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুতের স্বার্থে সরকারের উচিত এই বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ কাজে লাগানো।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম; সঞ্জয় কুমার দাস, পটুয়াখালী এবং সাইয়েদ জালাল উদ্দিন, কঙ্বাজার।] 
 

Sunday, December 26, 2010

কৃষ্ণসাগরের খুনি চিংড়ি

কৃষ্ণসাগরের খুনি চিংড়ি খুরশীদা রহমান চৈতীএসব চিংড়িকে বলা হয় খুনি চিংড়ি। এরা স্থানীয় বিভিন্ন জাতের চিংড়ি, ছোট ছোট মাছ বা মাছের পোনা ও কীটপতঙ্গের লার্ভা খেয়ে থাকে। আমেরিকার ওয়েলসে এদের পাওয়া গেছে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ডিকোরাগামারুস ভিলোসাস।
এই শিকারি খুনি চিংড়িদের নামে নানা ধরনের কথা রয়েছে। বলা হয় এই চিংড়ির দল যেখানে হানা দেয় সেখানকার প্রাণীকুলের পরিবেশ বদলে দেয়। যারা ওদের শিকার, তাদের বিলুপ্তি যখন তখন হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। কারণ ইউরোপের অনেক দেশে তাদের এই কুকীর্তি দেখা গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারে খুনি চিংড়িদের পাওয়া গেছে। ডি ভিলোসাস নামের এসব খুনি চিংড়ির আদি বাসস্থান কৃষ্ণসাগরের পার্শ্ববর্তী তৃণাঞ্চলের জলাশয়। গত দশ বছরে এরা পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ স্থানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। হানাদার এই চিংড়ি নূ্যনতম ৩ সেন্টিমিটার লম্বা। তবে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে, যার কারণে দেশীয় স্বাদু পানির চিংড়ির তুলনায় এরা আকারে বড় হয়।
খুনি চিংড়ি নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি মারাত্মক তথ্য। কারণ খাদ্যের বাইরে গিয়েও তারা হত্যার স্বার্থেই শিকার করতে ছোটে। কিছু কিছু কীট যেমন ড্যামসেনফ্লই এবং য়াটারবোটম্যান এরই মধ্যে ব্রিটেনের জলরাশিতে বিপন্ন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে এই খুন চিংড়ির কারণে। কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে দানিয়ুব নদী হয়ে এরা পশ্চিম ইউরোপে হানা দেয়। এই খুনি চিংড়িরা ব্রিটেনের জলরাশিতে যে কি বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা ভেবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির প্রধান কর্মকর্তা পল নিলস্টার বলেছেন, ব্রিটেনের জলরাশিতে এই চিংড়ি পাওয়া গেছে শুনে আমরা একেবারে মুষড়ে পড়েছি। কারণ স্থানীয় চিংড়িকেই ওরা আক্রমণের প্রধান টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে এরা মানুষের জন্য সরাসরি কোনো হুমকি নয়। খুনি চিংড়ির পিঠে তিনটি স্পাইক আছে যার জন্য ছোট মাছেরা এটিকে খেতে পারে না। কারণ মাছেরা গিলে ফেলতে গেলেই স্পাইকের জন্য মাছের গলায় আটকে যায়। খুনি চিংড়ির ঝাঁক যেখানে হানা দিয়েছে ইতোমধ্যে সেখানে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটিয়েছে। যেমন এদের কারণ জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং স্থানীয় কিছু কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। পশ্চিম ইউরোপে এরা ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়লেও উত্তর আমেরিকা থেকে এ ধরনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদের দেহ উভয় পাশ থেকে দাবানো বা চেপ্টা। বেশ বক্র আকারের এবং আধা-স্বচ্ছ। শরীরের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩০ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ মিঠা পানির চিংড়ির চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। শরীরের মধ্যে রয়েছে মাথা, বুক ও পেট। মাথার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সেখানে এক জোড়া চোখ, দুই জোড়া এন্টেনা এবং মুখের অংশবিশেষ রয়েছে। চোয়াল বড় ও বেশ শক্তিশালী যার জন্য এটি শিকারি প্রাণী হওয়ার কার্যকর বৈশিষ্ট্য শারীরিক গঠনসূত্রেই লাভ করেছে। বুকে ৭টি অংশ আছে। প্রতিটি অংশে একজোড়া করে পা। প্রথম দুই জোড়া পা খাবার আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করে। এরা শিকারকে কামড়ে কেটে বা ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করে। এরা বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে উপনিবেশ গড়ে তোলে এবং তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও অক্সিজেন মাত্রার তারতম্য সত্ত্বেও টিকে থাকতে পারে।

কথা বলা সামুদ্রিক মাছ

কথা বলা সামুদ্রিক মাছপরপয়স শুশুক জাতীয় এক প্রকারের সামদ্রিক প্রাণী আছে। এরা অনেক দিক দিয়েই মানুষের আচরণ নকল বা অনুকরণ করতে পারে। দেখতে এরা মাছের মতো হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা মাছের পর্যায়ে পড়ে না। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা বচ্চা প্রসব করে ও স্তন্যপান করিয়ে বাচ্চাদের লালন-পালন করে থাকে। তিমি, ডলফিন ও পরপয়স স্তন্যপায়ী প্রাণীর পর্যায়ভুক্ত। পরপয়সের আরেকটি বিশেষত্ব আছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য এদের কানকো নেই। ফুসফুসের মাধ্যমেই এরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। মাথায় এদের একটি ছিদ্র থাকে, এটিই ওদের নাক। শ্বাস গ্রহণ করবার সময় এরা মাথাটি পানির ওপর উঠায় এবং ছিদ্র পথে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া সম্পাদন করে। দৈর্ঘে-এরা ১.৭৫ মিটার পর্যন্ত হয়। মুখে এদের ৮০ থেকে ১০০টি দাঁত থাকে। এরা কালো অথবা পিঙ্গল উভয় বর্ণেরই হয়। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে এদের দেখতে পাওয়া যায়। সব জীবজন্তুর মধ্যে পরপয়সই সব থেকে বুদ্ধিমান বা চালাক। মানুষকে অনুকরণ করতে এরা খুব ওস্তাদ। মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করতেও এরা সক্ষম।

Source: Bangladesh-Pratidin